Email Against Uniform Civil Code
Home
Name:
Message:
প্রতি, সদস্য সচিব ভারতের আইন কমিশন ৪র্থ তলা, লোক নায়ক ভবন, খান মার্কেট, নতুন দিল্লি -১১০০০৩ বিষয়: ১৪ই জুন ২০২৩ তারিখে অভিন্ন দেওয়ান বিধি সম্পর্কিত পাবলিক নোটিশের প্রতিক্রিয়ায় আমার এই পত্র। ১) সংবিধানে অভিন্ন দেওয়ান বিধি(UCC) প্রণয়নের অনুচ্ছেদটি "নির্দেশ মূলক নীতিমালা" এর অধীনে রাখা হয়েছে যা কোনো 'কর্তব্য' নয় বরং একটি 'ক্ষমতা'র প্রয়োগ হিসাবে দেখানো হয়েছে। সংবিধান প্রণয়নের সময় দেশের সামাজিক অবস্থান ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ও বিতর্কের পর সংবিধান প্রণেতারা এটাকে শুধুমাত্র 'প্রচেষ্টামূলক' নীতি হিসেবে রেখেছিলেন যা থেকে স্পষ্টত প্রমাণিত হয়, ভারতের বহু-ধর্মীয় সমাজে অভিন্ন দেওয়ান বিধি সম্পূর্নরূপে অকার্যকর এবং অবাস্তব। অভিন্ন দেওয়ান বিধি প্রণয়ন এখনও অত্যন্ত কঠিন এবং অব্যবহারিক কারণ এখানকার বহু ধর্মীয় সমাজের জনসংখ্যার আনুপাতিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২) অভিন্ন দেওয়ান বিধি আইনটি ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার গুলোসহ অন্যান্য বিভিন্ন অনুচ্ছেদের বিরুদ্ধে অবস্থান করে। যেমন - অনুচ্ছেদ ২৫, অনুচ্ছেদ ২৬ এবং অনুচ্ছেদ ২৯। ৩) এটি সাধারনভাবেই অনুমান করা যায় যে, অভিন্ন দেওয়ান বিধি সমস্ত সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগত আইনগুলো খর্ব করবে। ব্যাক্তিগত আইনগুলো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার এবং অন্যান্য পারিবারিক সমস্যাগুলোর সমাধান দিয়ে থাকে৷ ব্যক্তিগত আইন ধর্ম ও সমাজের অবিচ্ছেদ্য উপাদান। মানুষের ব্যক্তিগত আইনের উপর হস্তক্ষেপ করার অর্থ হল বংশপরম্পরায় এক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তাদের সমগ্র জীবনযাত্রায় হস্তক্ষেপ করার সমান। ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং এখানে এমন কোন আইন তৈরি করা উচিত নয় যা জনগণের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নীতিকে বিপন্ন করে। ৪) ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতায় সমস্ত ধর্মের অস্তিত্বকে সমান মর্যাদা ও সম্মান সহকারে দেখা হয়। ভারতের মত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অবশ্যই তাদের নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনের স্বাধীনতা এবং তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত আইন অনুসরণ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। ৫) ভারতে ব্যাপক সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং উত্তরাধিকারের মতো ব্যক্তিগত বিষয়গুলির জন্য একটি সাধারণ এবং অভিন্ন নিয়ম প্রয়োগ করা কার্যত কঠিন। ৬) অনেক সম্প্রদায়, বিশেষত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অভিন্ন দেওয়ান বিধিকে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের উপর অন্যায্য হস্তক্ষেপ মনে করে। তারা ভয় করে যে, একটি সাধারণ নীতি তাদের ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করবে এবং এমন নিয়ম আরোপ করা হবে যা প্রধানত সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দ্বারা নির্ধারিত এবং প্রভাবিত। ৭) ভারতের সংবিধানে নিজের পছন্দের ধর্ম পালনের স্বাধীনতার অধিকার প্রদান করা হয়েছে। অভিন্ন নিয়ম লাগু হলে এই আইনের বাধ্যবাধকতায় ধর্মীয় স্বাধীনতার সুযোগ ক্ষুণ্ন হবে। ৮) বিকল্প হিসাবে বলা যায় যে, গণপরিষদে ডঃ আম্বেদকরের পরামর্শ অনুযায়ী অভিন্ন দেওয়ান বিধি একটি শর্তেই প্রণীত হতে পারে। তা হল, এটি শুধুমাত্র তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে যারা এই আইনকে মনপ্রাণে মেনে নিতে সম্মত। অতীতে বিশেষ বিবাহ আইন -১৯৫৪ এর ক্ষেত্রে যেমনটি করা হয়েছিল তেমনই ব্যাক্তির পছন্দের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নেওয়া হলে তবেই সরকারের পক্ষে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব রক্ষা করে এই আইন প্রয়োগ করা সম্ভব। ৯) আমাদের প্রিয় ভারতবর্ষের সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারকে অন্যান্য মৌলিক অধিকারের উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই অধিকারকে ব্যাহত করে অনুচ্ছেদ ৪৪ এর অধীনে সংবিধানের নির্দেশমূলক নীতিমালায় উল্লিখিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক গোলযোগের জন্ম দিতে পারে। ১০) জাতীয় স্বার্থে দেশের অক্ষুন্নতা, শান্তি এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার জন্য অভিন্ন দেওয়ান বিধি প্রনয়নের প্রচেষ্টা রদ করা ন্যায়সঙ্গত এবং বিচক্ষণতার পরিচয়। ধন্যবাদান্তে আপনার নাম
Send Email